চিয়া সিড: স্বাস্থ্যসচেতনদের পছন্দের ‘সুপারফুড’

চিয়া সিড—ছোট হলেও এর পুষ্টিগুণ বিশাল। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে এটি এখন এক জনপ্রিয় নাম। ‘সুপারফুড’ হিসেবে খ্যাত এই বীজে রয়েছে ভিটামিন বি-১, প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

নিয়মিত চিয়া সিড খেলে শরীরের বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে, ত্বক হয় উজ্জ্বল, চুল থাকে ঘন ও সুস্থ, এমনকি সামগ্রিকভাবে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। এ কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বহু মানুষ এখন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় চিয়া সিড যোগ করছেন।

কিন্তু যে কোনো খাবারের যেমন উপকারিতা আছে, তেমনি আছে কিছু সীমাবদ্ধতা। সবার জন্য সব খাবার সমানভাবে উপকারী নয়। তাই বিশেষ কিছু মানুষের জন্য চিয়া সিডও হতে পারে উল্টো ক্ষতির কারণ। অতিরিক্ত খেলে তা শরীরে অস্বস্তি, নানা জটিলতা কিংবা পূর্বের রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস, রক্তচাপ বা হজমজনিত সমস্যায় ভুগছেন কিংবা এলার্জি প্রবণ, তাদের চিয়া সিড খাওয়ার আগে ভালোভাবে ভেবে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হুট করে এই বীজ খাদ্যতালিকায় যোগ করলে উপকারের বদলে বিপদে পড়তে হতে পারে।

চলুন জেনে নিই , কোন চার ধরনের মানুষের জন্য চিয়া সিড বিপজ্জনক হতে পারে—

১. হজমের সমস্যা থাকা ব্যক্তিরা

চিয়া সিডে প্রচুর ফাইবার থাকায় এটি সাধারণত হজমের জন্য উপকারী। তবে যাদের আইবিএস বা দীর্ঘদিনের অন্ত্রসংক্রান্ত সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে চিয়া সিড উল্টো সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে পেট ব্যথা, ক্র্যাম্প, ডায়রিয়া ও ফোলাভাব হতে পারে। পুষ্টিবিদ আবনি কৌল বলেন, ‘হজমের সমস্যা থাকলে চিয়া সিড ভিজিয়ে পরিমাণমতো খাওয়া ভালো। এতে হজম সহজ হয়।’

২. ডায়াবেটিস রোগী ও রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ ওষুধে থাকা ব্যক্তি

চিয়া সিড রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই যেসব রোগী ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের সতর্ক হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চিয়া সিড নিয়মিত খাওয়া উচিত নয়।

৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ওষুধে থাকা ব্যক্তি

চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে। এতে অতিরিক্ত সেবনে রক্তচাপ নেমে যেতে পারে, যার ফলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। তাই যারা রক্তচাপ কমানোর ওষুধে আছেন, তারা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ না করে চিয়া সিড খাওয়া শুরু করবেন না।

৪. এলার্জি প্রবণ ব্যক্তি

কিছু মানুষের জন্য চিয়া সিড হতে পারে অ্যালার্জির উৎস। এতে দেখা দিতে পারে ত্বকে র‍্যাশ, চুলকানি, লালচে দাগ, বমি কিংবা শ্বাসকষ্ট। তাই প্রথমবার খাওয়ার আগে অল্প পরিমাণে পরীক্ষা করা উচিত। কোনো অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

চিয়া সিড সঠিকভাবে খাওয়ার নিয়ম

পরিমাণমতো গ্রহণ : দিনে ১-২ টেবিল চামচ পর্যাপ্ত।

ভিজিয়ে খাওয়া : চিয়া সিড ভিজিয়ে খেলে হজম সহজ হয় এবং অন্ত্রসংক্রান্ত সমস্যা কমে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন : চিয়া সিড অনেক পানি শোষণ করে, তাই দিনে প্রচুর পানি পান করা জরুরি।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন : অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে, গর্ভাবস্থা বা স্তন্যদান অবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তারকে জানান।

সূত্র : হেলথ শটস

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *