জুলাই সনদের বাস্তবায়ন না হলে বিপ্লব অসম্পূর্ণই থেকে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি সংস্কারহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যারা আওয়ামী আমলের মতো স্বৈরশাসন ফিরিয়ে আনতে চায়, তারাই সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের পক্ষে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন আয়োজিত ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এর আইনি ভিত্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। সভায় দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, রাজনীতিক ও আন্দোলনকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
তাহের আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ যাদের ক্ষমতায় এনেছে, তারাও এখন ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপোস করছে। এ অবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে পিআর পদ্ধতি অবিলম্বে চালু করা জরুরি।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীম বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র, শিক্ষক ও জনগণের সম্মিলিত গণঅভ্যুত্থান দেশের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। এর রাজনৈতিক অর্জন হলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ ও ঘোষণাপত্র। তবে দুঃখজনকভাবে এ গুরুত্বপূর্ণ দলিল এখনও আইনগত স্বীকৃতি পায়নি। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি এটি আইনি ভিত্তি না পায়, তাহলে বিপ্লবের অর্জন কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
অন্য বক্তারা বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতি চালু রয়েছে। বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি চালু হলে স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ হবে, সংলাপের সংস্কৃতি গড়ে উঠবে এবং বহু দলীয় অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। বক্তারা দাবি করেন, “প্রার্থী নয়, প্রতীকে ভোট” এই ভিত্তিতে নির্বাচন হলেই জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটবে।
সভায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে সংবিধানিক স্বীকৃতি না দিলে ভবিষ্যতে স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। জনগণের স্বার্থে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে পিআর ভিত্তিক নির্বাচন নিশ্চিত করা জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এম কোরবান আলী বলেন, পিআর পদ্ধতি শুধু একটি নির্বাচন পদ্ধতি নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সূচনা। আমাদের দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ও প্রশাসনিক দুর্বলতা দূর করতে হলে এ সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম, জিএম আলাউদ্দিন, অধ্যক্ষ ড. মো. সাখাওয়াত হোসাইন, অধ্যাপক নূর নবী মানিক, ড. আবুল কালাম পাটোয়ারী, ড. উমার আলী, ড. নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার বেলায়াত হোসাইন, মানবাধিকার নেতা ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া এবং অন্যান্য শিক্ষা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।