কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে, আর এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩০ মিটার, যা বিপৎসীমার (৫২.১৫ মিটার) ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে। এর আগে একই দিন দুপুর ১২টায় পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ১৫ সেন্টিমিটার এবং ভোর ৬টায় ১১ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়।
জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার মধ্যে রয়েছে—পাটগ্রামের দহগ্রাম; হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা।
এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনের বিস্তীর্ণ জমি। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা।
তিস্তাপাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল কবির বলেন, সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ পড়ছে লোকালয়ের রাস্তা ও বাঁধে। এগুলো রক্ষা করা না হলে হাজার হাজার বসতভিটা আর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে। তখন নদী এসে পৌঁছাবে উপজেলা শহরে।
তিস্তাপাড়ের গোবর্ধন গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন জানান, বুধবার সকাল থেকেই নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। ফলে চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে এবং মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। আমাদের জীবনযাপন এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের দিনমজুর সামসুল আলম জানান, নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে।
তিনি বলেন, পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে মানুষ চরম বিপাকে আছে। আমাদের বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। কিন্তু কেউ খোঁজখবর নিচ্ছে না। তাই প্রশাসনের কাছে দ্রুত সহযোগিতা চাই।
তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢলে ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩০ মিটার, যেখানে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। এ অবস্থায় নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বল্পমাত্রার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও জানান, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন।