৫৩ বছর পর জিটুবি সমঝোতা

মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ বছরে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করে, কিন্তু বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় মাত্র প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। ফলে দেশটির সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। এই ঘাটতি কমাতে রপ্তানির তালিকায় সেমিকন্ডাক্টর ও হালাল পণ্য ছাড়া উল্লেখযোগ্য পণ্য নেই। অথচ এই দুই খাতেই রয়েছে বড় সম্ভাবনার সুযোগ।

তাই এ দুটি খাতে মালয়েশিয়ার সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের দুটি সমঝোতা হয়েছে।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) একটি প্রতিনিধিদল ১১-১৩ আগস্ট কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫-এ অংশগ্রহণ করে এবং সেখানে সেমিকন্ডাক্টর ইনোভেশন ও ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট অগ্রসরে মালয়েশিয়ার জাতীয় অ্যাপ্লাইড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার–মাইমোস ও মালয়েশিয়ার অ্যাডভান্স সেমিকন্ডাক্টর একাডেমি–আসেমের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।

এ সমঝোতার ফলে দুই দেশের মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, যৌথ গবেষণাগার স্থাপন, ইঞ্জিনিয়ার প্রশিক্ষণ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে জানায় বিএমসিসিআই। এ ছাড়া আগামী ১৭-১৯ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য হালাল পণ্যের মেলায় অংশগ্রহণ করবেন দেশের ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএমসিসিআই। এতে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি ও চিহ্নিত দুই খাতের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাব্বির এ খান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার শাহিদসহ আরো অনেকে।

শাব্বির খান বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে প্রবেশের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।

মালয়েশিয়ার সাথে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি ২.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ ঘাটতি কমাতে আমরা সেমিকন্ডাক্টর ও হালাল ফুডস—এই দুটি খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজারের আকার ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়াবে। উচ্চমূল্যের এই প্রযুক্তিনির্ভর খাতে বাংলাদেশ যদি সক্রিয় না হয় তবে বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।

তিনি জানান, ২০২৫ সালে মালয়েশিয়া বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজারে ১৯.৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শিল্প নিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।

এ ছাড়া দেশটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস (ইএন্ডই) রপ্তানি খাতের আকার ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ১২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে, মালয়েশিয়ার বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দক্ষ জনবল সংকট। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির ৬০ হাজার দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হবে, অথচ স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাবে মাত্র ১৫ হাজার। তাই জনবল ঘাটতি মেটাতে তারা দক্ষ জনশক্তি বিদেশ থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএমসিসিআই সভাপতি আরো জানান, মালয়েশিয়ায় আগামী ১৭-১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস (এমআইএইচএএস) অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার হালাল পণ্যের বাজারে প্রবেশের দ্বার উন্মোচন হবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক হালাল পণ্যের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরো শক্তিশালী হবে। মালয়েশিয়া বর্তমানে বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলারের হালাল পণ্য আমদানি করে। যা ২০৩০ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *